২০২০ সালের ১৫ ই মার্চ ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় করোনা ভাইরাসের কারণে। এরপর থেকে দুবছর বন্ধই ছিলো পর্যটকদের জন্য সড়কপথে ভারত যাওয়া। গত বছরের নভেম্বরে ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হলেও সেটা শুধুমাত্র বাই এয়ারেই দেয়া হচ্ছিলো। অবশেষে গত ২৮ই মার্চ ২০২২ থেকে শুরু হয় বাই রোডে পর্যটক ভিসা ইস্যু করা। এরপর থেকেই ঢল নামে ভারতীয় ভিসার আবেদন কেন্দ্রগুলোতে। এমনকি আগের রাতে যেয়ে ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় লোকজনকে। তবে অনেকেই এখনো ভিসা পাননি বলে জানিয়েছেন।
সময়মতো আইভ্যাক থেকে পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ঈদের লম্বা ছুটিতে ভারত যাওয়া। এদের মধ্যে অনেকেই ঈদের ছুটির শুরুতেই বিমান/বাস/ট্রেনের টিকেট করে রেখেছিলো। ঈদের টিকেট অফেরতযোগ্য হওয়া আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। আবার শেষ মুহূর্তে ভিসা পেলেও তখন আর নতুন করে টিকেট করা সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তিত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মূলত ১৩ এপ্রিল ২০২২ বা তার পরে যারা জমা দিয়েছেন, তাদের অনেকের ভিসা এখনো ইস্যু হয়নি। ভারতের ভিসা আবেদনের পরে পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য একটি তারিখ দেয়া থাকে। এছাড়া অনলাইনে আইভ্যাকের ওয়েবসাইট থেকে ট্রেকিং করে অগ্রগতি দেখা যায়। সাধারণত ভিসার আবেদন জমা দেবার ৩-৪ দিনের মধ্যেই মোবাইলে মেসেজ আসে যাতে ভিসা প্রসেস হয়েছে এ কথা লেখা থাকে।
১৩ তারিখে যারা ঢাকার আইভ্যাকে ভিসার জন্য জমা দিয়েছেন এরকম কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের পাসপোর্ট ডেলিভারি তারিখ হিসেবে ২৫ এপ্রিল বা তার পরে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মোবাইলে মেসেজ না আসলে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হবেনা জানিয়েছে আইভ্যাক। নির্ধারিত তারিখে বা তার পরে আইভ্যাক অফিসে যেয়েও কোন লাভ হয়নি তাদের।
ঢাকার বাসিন্দা অন্তু তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সিকিম যাওয়ার পরিকল্পণা করেছিলেন। ১৭ তারিখে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে ২৬ তারিখে সম্ভাব্য ডেলিভারি ডেইট পেয়েছিলেন। সে অনুসারে ২৭ তারিখ রাতের ঢাকা-শিলিগুড়ির বাসের টিকেট করে রেখেছিলেন। কিন্তু ২৬ তারিখ পেরিয়ে গেলেও এসএমএস আসেনি তাদের। ফলে এই ট্রিপ বাতিল করার মতো অবস্থায় এসে পৌছেছেন তারা।

এদিকে একই সময়ে আবেদন করে মেসেজ চলে আসায় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পেরেছেন অনেকে। ধানমন্ডির বাসিন্দা ফয়সাল ১৩ তারিখে অনেক ভিড়ের মধ্যে আবেদন করেছিলেন। ডেলিভারির তারিখ ২৫ এপ্রিল দেয়া থাকলেও ২০ এপ্রিল “ভিসা প্রসেসড” মেসেজ পান। ২১ এপ্রিল কোন ভিড় ছাড়া কয়েক মিনিটেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি। আইভ্যাক সূত্রে জানা গেছে যাদের ভিসা প্রসেসড মেসেজ এসেছে তারা সেদিনই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। বাকিদের অবশ্যই মেসেজর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাইরোডে ভিসা দেয়া শুরু করার সাথে সাথেই ঈদের লম্বা ছুটিকে সামনে রেখে অনেকে ভারত যাওয়ার পরিকল্পণা করেছেন। ফলে ভিসা কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আবার আগে থেকে যাদের বাই এয়ার ভিসা ছিলো তারাও “পোর্ট অ্যাড” করার জন্য হাজির হয়েছিলেন আইভ্যাকে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ভিসার আবেদন প্রতিদিন ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ঈদে অন্তত ৫ লাখ পর্যটক ভারতে বেড়াতে যাবে। ভিড় সামলাতে রোজায় আইভ্যাকের সময়সূচি বাড়ানো হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ভিসা আবেদনের সময়সূচী বাড়িয়ে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত করা হয়। পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয় বিকেল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।

এই উদ্যোগগুলোর ফলে কমে যায় লাইন। ১৭ তারিখের পর থেকে আর ভিড় দেখা যায়নি। কিন্তু যারা আবেদন করেছেন তাদের অনেকেই এই জটের মধ্যে পড়েছেন। ফলে সময়মতো তাদের পাসপোর্ট পাওয়া এখন অনিশ্চিত। সবগুলো স্থলবন্দর না খোলার কারণে অনেকে ভিসা পেয়েও আবার “পোর্ট অ্যাড” করার জন্য আবেদন করেছেন। তারাও এখনো পাসপোর্ট ফেরত পাননি। এদিকে গতকাল থেকেই বেনাপোল স্থল বন্দরে ভারতগামী যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়ে গেছে।
ফিচার ছবি: © Yann Forget / Wikimedia