আগামীর রবিবার (২৪ এপ্রিল ২০২২) থেকে আবেদন করা যাবে বাংলাদেশ-ভারতের রেলপথের বহুল ব্যবহৃত পোর্ট গেদে। বাংলাদেশ অংশে এর স্থলবন্দর দর্শনা, যা চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তর্গত। গেদে পোর্টে দিয়ে ভিসার আবেদন নিলেও ট্রেন চলাচল ঈদের আগে শুরু হবার সম্ভাবনা খুবই কম। যাদের গেদে হয়ে ভিসা থাকবে তারা অবশ্য এখুনি স্থলপথে অতিক্রম করতে পারবে না এই পোর্ট,শুধুমাত্র ট্রেনে যেতে পারবে। আর যাদের ভিসা আছে তাদেরকে ট্রেনে যেতে হলে পুণরায় বাই ট্রেন গেদে অ্যাড করে নিতে হবে।
করোনার আগে বাই রোড/বাই ট্রেন গেদে ডিফল্ট অপশন ছিলো। তখন যে ভিসায় থাকনা কেন বাই এয়ার/গেদে/হরিদাশপুর হয়ে ভারতে যাতায়াত করা যেতো। করোনার পর গত বছরের শেষ দিকে ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া শুরু করলেও শুধুমাত্র বাই এয়ার ভিসা দিচ্ছিলো। এবছরের ২৮ এই মার্চ থেকে বাই রোড ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া শুরু করে ভারত। প্রায় একই সময়ে ২৫ই মার্চ থেকে বাংলাদেশও ভারতের নাগরিকদের ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া শুরু করে।
বাই রোডে ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা দেবার তথ্যটি ভ্রমণগুরু থেকে ২৭ই মার্চ ২০২২ প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই সে পোস্টের কমেন্টে বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন। তবে ২৮ ই মার্চ ২০২২ বাইরোডে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে পারার পর পরই সবার ধারণা পরিবর্তীত হয়ে যায়। এর পর থেকে বাড়তে শুরু করে ভারতের ভিসা কেন্দ্রগুলোতে ভিড়। ঈদের লম্বা ছুটিকে সামনে রেখে অনেকেই ভিসা করতে ভোর থেকেই ভিড় করেন ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের সামনে।
চাপ সামলাতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে ভারতীয় হাইকমিশন। এছাড়াও রোজার মাসের সংক্ষিপ্ত সময়সূচীর পরিবর্তে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বর্ধিত সময়ে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ভিসার আবেদন কেন্দ্রগুলো খোলা রাখে তারা। এর মধ্যে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ভিসার আবেদনপত্র জমা নেয়া হয় এবং বিকেল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পাসপোর্ট ফেরত দেবার কার্যক্রম চলে।
এসব উদ্যোগের ফলেই ১৭ই এপ্রিল থেকে আর ভিড় দেখা যায়নি ভিসা কেন্দ্রগুলোতো। আমি ২১ তারিখে পাসপোর্ট ফেরত আনতে গেলে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। ভিড় তো দূরে থাক বেশিরভাগ কাউন্টারই ফাঁকা ছিলো যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ঢাকার ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র। এছাড়া পাসপোর্ট জমা দেবার জন্য যে তারিখই দেকনা কেন প্রসেসড মেসেজ আসলেই ভিসা নিয়ে আসতে পেরেছে সবাই।
তবে ভিসা পেলেও অনেকেই পোর্ট সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগেছেন। প্রথমদিকে প্রায় সবাইকে আবেদিত ভিসার সাথে বাই এয়ার/হরিদাশপুর/আগরতলা দিয়েছিলো ডিফল্ট পোর্ট হিসেবে। এর বাইরে চেংড়াবান্দা, ডাউকি, ফুলবাড়ী হয়েও ভিসা ইস্যু করা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন যারা ফুলবাড়ী আবেদন করেছিলেন তাদেরকে শুধুমাত্র ডিফল্ট পোর্টগুলোই দিয়েছে (বাই এয়ার/হরিদাশপুর/আগরতলা)।

এদিকে গেদে পোর্ট দিয়ে ভিসা দিলেও ঈদের আগে ট্রেন চলাচল শুরুর সম্ভবনা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের বন্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আগে মাত্র এক সপ্তাহ সময়ে ট্রেন চালু করা সম্ভব না হলে ঈদের পর চালু হবে ট্রেনগুলো। তার মধ্যে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের জন্য নতুন কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। এগুলো আগের মতো যথাক্রমে গেদে ও পেট্রোপোল হয়ে চলাচল করবে। কিন্তু মিতালী এক্সপ্রেসের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এর চলাচল বিলম্বিত হতে পারে।
ভারতের বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলের অপেক্ষায় থাকা তিনটি ট্রেনের বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো:
বন্ধন এক্সপ্রেস (খুলনা-কলকাতা-খুলনা): খুলনা থেকে কলকাতা চলাচল করে বন্ধন এক্সপ্রেস। খুলনা স্টেশন থেকে কলকাতা স্টেশন (চিতপুরের) মধ্যে চলাচল করে এ ট্রেন। ট্রেনের জন্য বাই ট্রেন পেট্রোপোল পোর্ট নির্বাচন করতে হয়। বাংলাদেশের অংশে বেনোপোল স্টেশনে ও ভারতের অংশে কলকাতার কলকাতা স্টেশনে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। ভিসা পাওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেনের টিকেট কাটা যাবেনা। টিকেট পাওয়া যায় খুলনা রেলস্টেশনে এবং ভারতের ফেয়ারলী প্যালেস ও কলকাতা স্টেশনে।
ভাড়া: এসি চেয়ার/স্নিগ্ধা ১,৫০০ টাকা ও এসি সিট/বার্থ ২,০০০ টাকা। এর মধ্যে ট্রাভেল ট্যাক্স অন্তর্ভূক্ত। সময়সূচী: খুলনা থেকে ছাড়ে দুপুর ১:৩০ মিনিটে, কলকাতা থেকে ছাড়ে সকাল ৭:১০ মিনিটে। খুলনা হতে ছাড়ে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার। কোলকাতা হতে ছাড়ে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার।
মিতালী এক্সপ্রেস (ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা): মূলত দার্জিলিং-সিকিমের জন্য জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের চালু হতে যাচ্ছে এ ট্রেন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে চলাচল কবে এ ট্রেন। ট্রেনের জন্য বাই ট্রেন ফুলবাড়ী পোর্ট নির্বাচন করতে হবে। ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ও শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। ভিসা পাওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেনের টিকেট কাটা যাবেনা। টিকেট পাওয়া যায় বাংলাদেশে কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে এবং ভারতের ফেয়ারলী প্যালেস ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে।
ভাড়া: এসি চেয়ার ২,৭০৫ টাকা ও এসি সিট ৩,৮০৫ টাকা ও এসি বার্থ ৪,৯০৫ টাকা। এর মধ্যে ট্রাভেল ট্যাক্স অন্তর্ভূক্ত। সময়সূচী: ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ৯:৫০ মিনিটে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়ে রাত ১১:৪৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়)। নিউজলপাইগুড়ি ছাড়বে- রবিবার ও বুধবার। ঢকা ক্যান্টনমেন্ট ছাড়বে- সোমবার ও বৃহস্পতিবার।
ফিচার ছবি সবুজ খান