বর্ষা বাংলাদেশের অনেক মানুষের প্রিয় ঋতু। বৃষ্টি পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এছাড়া বর্ষায় বাংলাদেশের প্রকৃতির যে রূপ দেখা যায় বছরের অন্য কোন সময় সেটা পাওয়া যাবেনা। ধরুণ সিলেট অঞ্চলের কথা, বাংলাদেশের বর্ষার রাণী হয়ে উঠে সিলেট। এছাড়া বন, ঝর্ণা, সমুদ্র, হাওড়-বাওড় বলে মিলে বাংলাদেশে বর্ষায় প্রকৃতি যেন তার সব রুপের পেখম মেলে ধরে। সাধারণ সময়ে ঘোরাঘুরির সাথে বর্ষায় ঘোরাঘুরির কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই, বর্ষা কালে ভ্রমণে বের হতে হলে কী কী জিনিস সঙ্গে থাকা জরুরী সেটা নিয়েই এই আর্টিকেল।
ব্যাকপ্যাক ও রেইন কভার: যে কোন ভ্রমণের কথা মাথায় আসলে শুরুতেই আমাদের মনে আসে ব্যাকপ্যাকের কথা। ভালো মানের একটি ব্যাকপ্যাক (পিঠে ঝোলানো যায় এমন ব্যাগ) আপনার ভ্রমণকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। সাধারণত ভালো মানের ব্যাকপ্যাকে অতিরিক্ত রেইন কভার দেয়া থাকে। ফলে তুমুল বৃষ্টিতেও প্রয়োজনীয় কোন কিছু না ভিজিয়ে ভালোভাবেই ঘোরাঘুরি করতে পারবেন।
আর আপনার ব্যাকপ্যাকে যদি রেইন কভার দেয়া না থাকে তবে চাইলেই অতিরিক্ত রেইন কভার কিনে নিতে পারেন। দেশের অনেক অ্যাডভেঞ্চার শপে খুঁজে পাবেন এই রেইন কভার, দাম পড়বে মান ও সাইজ ভেদে ২০০-৫০০ টাকা। এধরণের রেইনকভার সহজেই ভাঁজ করে ব্যাগের পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে পারবেন। এছাড়া অনেক ব্যাকপ্যাকে নিচের দিকে রেইন কভার রাখার জন্য ছোট পকেটও থাকে, সেখানে রাখতে পারেন।

রেইনকোট ও পনচো: বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ভালো মানের রেইনকোন বা পঞ্চ থাকা জরুরী। সাধারণত যে জায়গাগুলোতে আমরা বর্ষার সময় যাই, সেখানে ছাতা তেমন একটা কাজে আসেনা। আবার ঝড়-বৃষ্টি হলে ছাতা ভেঙ্গে গিয়ে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই রেইনকোট বা পনচো সঙ্গে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকে গরম লাগে বলে রেইনকোট পড়তে পছন্দ করেন না, আবার পিঠে ব্যাগ থাকলে রেইনকোট পড়তে/খুলতে সমস্যা হয়। এজন্য পঞ্চ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ভাঁজ করে ছোট প্যাকেটে রাখা সম্ভব এধরণের পনচো পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারের সুবিধা হচ্ছে ব্যাকপ্যাক পিঠে থাকলেও পনচো পড়তে বা খুলতে সমস্যা হয়না। এছাড়া সাইজে খুব ছোট বলে সহজে বহনও করা যায়। মান ভেদে রেইনকোটের দাম ৫০০ থেকে ২,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে। আর পনচোর দাম পড়বে ৮০০-১,০০০ টাকা।

মোবাইল রেইন কভার: বর্ষাকালে সচেয়ে ঝুকির মুখে থাকে মোবাইল ফোন। আপনার ফোন ওয়াটারপ্রুফ না হলে বৃষ্টি বা পানিতে তে ভিজে যেয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই একটা মোবাইলের রেইন কভার সঙ্গে রাখতে পারেন। এছাড়া জিপলক ব্যাগ পাওয়া যায়। চাইলে এ ধরণের ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। স্টেশনারী শপে জিপলক ব্যাগ পাবেন, বেশি বড় না নিয়ে মোবাইল ভালোভাবে রাখতে পারবেন এই সাইজের নিবেন। মোবাইল রেইন কভার পাবেন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর জিপলক ব্যাগ ২০-৩০ টাকায় পাবেন।

লাইফ জ্যাকেট বা ভেস্ট: সাঁতার জানা থাকুক বা নাই থাকুক হাওড় বা নদীতে ভ্রমণের জন্য এসময় লাইফ জ্যাকেট বা ভেস্ট সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। ঝড়-বৃষ্টিতে ও প্রবল স্রোতের আপনার জানা সাঁতার কাজে নাও আসতে পারে। এছাড়া প্রতি গ্রুপেই সাঁতার না জানা অনেকজন থাকবে, দূর্ঘটনা ঘটলে তারাও আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই সবার সাথেই লাইফ জ্যাকেট বা ভেস্ট থাকাটা জরুরী। মান ভেদে লাইফ জ্যাকেট ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,০০০ টাকার মধ্যে পাবেন।

ট্রেকিং স্যান্ডেল: বর্ষায় ভ্রমণের জন্য ভালো মানের ট্রেকিং স্যান্ডেল ব্যবহার করা উচিত। বৃষ্টি ও কাঁদার মধ্যে পথ চলার জন্য স্যান্ডেলের গ্রিপ ভালো থাকা জরুরী। এছাড়া প্রয়োজনে বার বার ধোয়ার মতো স্যান্ডেল হতে হবে। ভালো হয় যদি স্যান্ডেল আপনার পা যথাসম্ভব ঢেকে রাখে। এতে করে ট্রেকিংয়ের সময়ে পায়ে আঘাত পাওয়া সম্ভাবনা কমে যায়। বাজারে বিভিন্ন দামের ও মানের ট্রেকিং স্যান্ডেল পাওয়া যায়। মান ভেদে একেবারে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,০০০ টাকার স্যান্ডেল পাওয়া যায়। একেবারে সস্তা না কিনে অন্তত ৮০০-১,০০০ টাকা বাজেট করা উচিত।

কুইক ড্রাই শার্ট, প্যান্ট ও টিশার্ট: বর্ষাকালের কাপড়চোপড় এমন হওয়া উচিত যেটা বৃষ্টিতে ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। একটু বৃষ্টি পড়া বন্ধ হলে বা বাতাসের সংস্পর্ষে এলে এধরণের কুইক ড্রাই ফেব্রিক দ্রুত শুকিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করে। তাই বর্ষার জন্য কুইক ড্রাই শার্ট, প্যান্ট/ট্রাউজার ও টিশার্ট ব্যবহার করতে পারেন। এধরণের শার্ট ৪০০ থেকে ১,২০০ টাকা, প্যান্ট/ট্রাউজার ৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকা, টি শার্ট ৪০০-১,২০০ টাকায় পাবেন।

গামছা বা কুইক ড্রাই তোয়ালে: অন্যান্য কাপড় চোপড়ের সাথে অবশ্যই একটা গামছা থাকা প্রয়োজন। গামছা সহজে শুকায়, প্রয়োজনে রোদে আড়াল দেয়, এবং সহজেই বহন করা যায়। ভিজে গেলেও মাথায় বা ব্যাগের উপর নিয়ে ঘুরতে পারবেন। এছাড়া কুইক ড্রাই তোয়ালেও পাওয়া যায় যেটা দাম ১০০০ টাকা থেকে শুরু। কম খরচে গামছাই তাই ভালো সমাধান।
ড্রাই ব্যাগ বা ওশেন ব্যাগ: বেশির ভাগ জিনিপত্র যদি আপনাকে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে রাখতে হয়, সেজন্য ড্রাই ব্যাগ বা ওশেন ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরণের ব্যাগে ক্যামেরা, ল্যান্ড, মোবাইল, মানিব্যাগ, জুতো, কাপড়চোপড় সব কিছুই রাখতে পারবেন। ব্যাগ পানিতে পড়ে গেলোও কোন কিছু ভিজবেনা বা ক্ষতি সাধন হবেনা। সাধারণ জলপথে ভ্রমণের জন্য বা ঝর্ণায় গেলে আমরা ড্রাইব্যাগ ব্যবহার করি। ১,০০০ টাকা থেকে ড্রাই ব্যাগের দাম শুরু হয়।

কোথায় পাবেন:
পিক সিক্সটি নাইন আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার: জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার শপ পিক সিক্সটি নাইনের দোকান বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দোতলায়। ভালোমানের ব্যাকপ্যাক, রেইন কভার, পনচো, ওশেন ব্যাগ, কুইক ড্রাই তোয়ালে এখানে পাবেন । এছাড়া অনলাইনে শপিং করার সুযোগ আছে: ঠিকানা:
Peak 69 Outdoor and Adventure
Shop 10-11, Block C, Level 2,
Bashundhara City, Dhaka 1215
ওয়েবসাইট: www.peak69.com
পেইজ: www.facebook.com/peak69
ডেকাথলন: ঢাকা উত্তরায় ডেকাথলনের একটি ল্যাব স্টোর আছে। এখানে ব্যাকপ্যাক, কুইক ড্রাই এপারেলস পাবেন। : ঠিকানা:
Decathlon Sports Bangladesh
Plot 16-17 (GF), Road 12, Sector 6,
Uttara, Dhaka 1230
ওয়েবসাইট: www.decathlon.com.bd
পেইজ: www.facebook.com/decathlonBGD
আউটডোর্স বিডি: মূলত অনলাই শপ। এখানে পনচো, রেইন কভার, হ্যামক, মোবাইলের রেইন কভার সহ আউটডোর অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিপত্র পাবেন। ঠিকানা:
Outdoors BD
168/1 Khan Plaza,
South Kamlapur-1217 Dhaka
ওয়েবসাইট: www.outdoorsbd.com
পেইজ: www.facebook.com/outdoorsbd
ট্রিপমেট : ভ্রমণের উপযোগী ট্রাউজার, টিশার্ট, জ্যাকেট ও রেইনকোট পাওয়া যাবে এখানে। এছাড়া কয়েক ধরণের জুতোও পাবেন। ঠিকানা:
Tripmate Bangladesh
Shop 50, Level 3,
Capital Super Market, Farmgate, Dhaka
পেইজ: www.facebook.com/tripmate
চরণ যুগল: ভালো মানের ট্রেকিং স্যান্ডেল পাবেন এই অনলাইন শপে। ঠিকানা:
চরণ যুগল
ওয়েবসাইট: www.ChoronJugol.com
পেইজ: www.facebook.com/Choronjugol
গেট সাম: অনলাইন এ শপে বর্ষার ভ্রমণের উপযোগী কাপড়চোপড় পাবেন। ফেইসবুক পেইজ লিংক: https://www.facebook.com/GetSome20
ফোর সিজন: ঢাকার বনশ্রীর এই শপে ব্যাকপ্যাক, পনচো, রেইনকোট ও ট্রাভেলের জন্য বিভিন্ন ধরণের পোশাক পাবেন। ঠিকানা:
Four Seasons BD
Shop No- 1/214(2nd Floor)
Eastern Banabithi Shopping Complex,
420 Dakhin Banasree Project Road, Dhaka 1217
পেইজ: https://www.facebook.com/fourseasonsbd
ফিচার ছবি: লেখক