”ওয়ার্ক ফ্রম হোম” বিষয়টা সারা বিশ্বে প্রচলিত থাকলেও করোনাকালীন সময়েই আমাদের অনেকের সাথে পরিচয় ঘটেছে। ভাইরাস রুখতে যখন বিশ্বব্যাপী কঠিন লকডাউন ছিলো, তখন বেশির ভাগ অফিসই ”ওয়ার্ক ফ্রম হোম” অর্থ্যাৎ বাসায় বসেই কাজ করার ব্যবস্থা চালু করে। গত দুবছরে কমেছে করোনার দাপট, অফিসে ফিরেছেন অনেকেই। আবার কিছু অফিস স্থায়ীভাবেই বেছে নিয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
পৃথিবীব্যাপী অনেক অফিস হাইব্রিড মডেলে চলে গেছে, অর্থ্যাৎ সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের হয়তো তিনদিন অফিসে আসবেন বাকিটা বাসা থেকেই করবেন। অফিসে ফিরতে বলায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যুগে এসে নতুন পরিকল্পণা করছে ইন্দোনেশিয়া। যারা স্থায়ীভাবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন, তারা চাইলেই সেটাকে ওয়ার্ক ফ্রম বালিতে পরিণত করতে পারবেন খুব তাড়াতাড়ি।
যাদের রিমোট জব আছে তাদেরকে “ডিজিটাল নোম্যাড” ভিসা দিবে দেশটি। পাঁচ বছরের এ ভিসা পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। সবচেয়ে বড় বিষয় যাযাবর ভিসা যারা পাবে তাদের আয়ের উপর কোন করও বসাবেনা ইন্দোনেশিয়ার সরকার। বর্তমানে ৭২ টি দেশেকে অন এরাইভাল ভিসা দিচ্ছে তারা। বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা ২০১৬ সাল থেকে অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা পেলেও করোনার পর থেকে সেটি বন্ধ আছে।

তবে এই ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা পাবে সব দেশের লোকজনই। শর্ত হচ্ছে তার আয় ইন্দোনেশিয়ার বাইরে থেকে আসতে হবে এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত যতদিন আয় আসবে ততদিনই থাকতে পারবে। রিমোট জবের জন্য ইন্দোনেশিয়া আগে থেকেই ডিজিটাল নোম্যাডদের কাছে জনপ্রিয়। এদের অনেকেই এক মাসের জন্য এসে বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে থেকে যেতো অনেকদিন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া সরকার ছয় মাসের জন্য সাময়িক কাজের ভিসাও দিতো।

তবে এখন আর তাদেরকে চিন্তা করতে হবেনা ভিসা শেষ হওয়া নিয়ে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। একদিকে সাগর, বালুময় সৈকত অন্যদিকে পাহাড় মিলে বালিকে বলা হয় “দ্যা হ্যাভেন অন আর্থ”। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এ দ্বীপটি প্রতি মাসে গড়ে ১৩ লক্ষ পর্যটক পেতো। করোনায় উল্টে গেছে সব হিসেব নিকেশ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্য অনুসারে আসিয়ান দেশগুলোতে পর্যটন খাতে ৯০ লক্ষ লোক চাকরি হারিয়েছে।

এ বছরের শুরুতে টিকা নেয়া পর্যটকদের জন্য আবার ভিসা চালু করার পর মে মাসে সর্বোচ্চ ১১২,০০০ পর্যটক পেয়েছে বালি, যেটা করোনার আগের গড়ের দশ শতাংশ। বালিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসতো চীন ও রাশিয়া থেকে। করোনা নিয়ে ভুগতে থাকা চীন তাদের পর্যটকদের দেশে ফিরলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেইন্টাইন রাখাতে এখন সে দেশ থেকে পর্যটক যাচ্ছেনা। আবার যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সাথে বিমান যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার পর্যটকরাও কোন ধরণের লেনদেন করতে পারছেনা।
এসব কারণে এখনও আগের জায়গায় ফিরতে পারেনি বালির পর্যটন। দেশটির সরকার তাই পর্যটক টানতে উঠে পড়ে লেগেছে। অন্যদিকে পৃথিবীতের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান “Work from everywhere” নীতিতে চলে এসেছে। ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা চাইলেই বালিতে কোন কটেজে স্থায়ী হয়ে যেতে পারেন। জানালা খুললেই ভারত মহাসাগরের সৌন্দর্য, সপ্তাহান্তে উবুদে ছুটে চলা সব মিলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে বহুগণ।

ঠিক একারণেই বালি পছন্দ বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের। এছাড়া জীবন-যাত্রার ব্যয় অনেকাংশে কম। এ মুহূর্তে পৃথিবীর অন্তত ৩৩ টা দেশ এই ডিজিটাল যাযাবরদের ভিসা দিচ্ছে থাকার জন্য। এ তালিকায় রয়েছে জার্মানি, মেক্সিকো, এস্তোনিয়ার মতো দেশও। তবে সবার সাথে পার্থক্য থাকছে ইন্দোনেশিয়ার, কারণ বাকি সবগুলো দেশ এক থেকে দুবছরের ভিসা দিচ্ছে। অবশ্য অধিকাংশ দেশই এই যাযাবরদের আয়ের উপর কর বসাচ্ছেনা।

বালিতে যারা থেকে রিমোট জব করছেন তাদের প্রায় সবাই প্রধানত দুটো অঞ্চলে থাকছেন। এর একটি হচ্ছে পাহাড়ি শহর উবুদ আর অন্যটি হচ্ছে সৈকতে শহর ছাংগো। যারা পাহাড় ভালবাসেন এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে আগ্রহ আছে তারা থাকছেন উবুদে আর যারা সমুদ্র সৈকত ভালোবাসেন তারা থাকছেন ছাংগোতে। তবে বালিতে কাজ করার সমস্যাও কিন্তু আছে, এত সুন্দর জায়গায় যে কোন সময় কাজ ফেলে দৌড় দিতে ইচ্ছে করবে সার্ফিং বা ডাইভিংয়ে!
ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে গণহারে পর্যটক আকর্ষণ করার চেয়ে অল্প পর্যটকদের কাছ থেকে বেশি আয়ের চিন্তা ভাবনা করছে। তাদের পরিকল্পণা রয়েছে আগের মতো নয়, বরং ৩০-৪০ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে আসবে এদেশে এবং বেশি সময় থেকে ভালো সময় কাটিয়ে যাবে।
ফিচার ছবি Wikimeida