শরৎকাল বলতেই মাথায় যে জিনিসটা সবচেয়ে আগে কাজ করে তা হল কাশবন। কাশবন মানেই বাঙালির মাথায় ও মননে ঘোরে দুর্গাপুজোর পদধ্বনি। বই পুস্তকের ভাষায় বলতে গেলে কাশফুল মূলত একটি বহুবর্ষজীবী ঘাস। মূলত বালুকাময় নদীর তীরে শরৎকালের ফুটে এই শ্বেত শুভ্র কাশফুল। তবে আধুনিক নগরায়নের ফলে এর কিছুটা চারিত্রিক পরিবর্তন হয়েছে তাই এখন শহরের নানা জায়গাতেও এর দেখা মেলে। এর ফলে শহুরে অধিবাসীদের ও সুযোগ হয়েছে ছুটির বিকেলে কাশবন দেখার।

কাশফুল পছন্দ করেন না এ ধরনের লোক খুঁজে পাওয়া ভার। ইট কাঠ পাথরের এই শহরে একটু প্রশান্তি এবং বিনোদনের জন্য হাহাকার করে মাংসের খাচায় বদ্ধ আত্মা গুলো। খোলা আকাশের নিচে দিগন্ত বিস্তৃত কাশবনে মৃদুমন্দ হাওয়া কিংবা ঝুমঝুম বৃষ্টি উপভোগ্য সবার কাছেই। শহরের একঘেয়ে মানুষজন একটু প্রশান্তির খোঁজে কাশ বনে যায়। কেউবা যায় নিজের মন মাতানো ছবি তুলতে কেউবা মডেলিং করতে। আবার কেউ কেউ প্রেয়সীর বায়নায় সায় দিয়েই চলে যেতে পারেন কাশবনে। কাশবনে যাওয়ার কারণের শেষ নেই আর কাশবনের ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলানোরও শেষ নেই। সকালে এক রূপ কিংবা সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় আরেক রূপ। বৃষ্টির সময় তার রূপের যে কত খেলা তা বলে শেষ করা যাবেনা।

ঢাকায় বেশ কিছু জনপ্রিয় কাশফুল দেখার স্থান রয়েছে যেগুলো বেশিরভাগই নব্য ডেভলপমেন্ট এরিয়া। নদী থেকে ড্রেজিং করে বালি ফেলার কারণে এখানে কাশফুলগুলো দেখা যায় যদিও ঢাকার বাহিরে সব নদীর ধারে ফোটে এই ফুল।
ঢাকার অন্যতম স্থান গুলোর মাঝে দিয়াবাড়ি, আফতাবনগর আর কেরানীগঞ্জের সারিঘাট বেশ জনপ্রিয়।

এই পোস্টে আমি সারিঘাটের কিছু কাশবনের ছবিযুক্ত করলাম সাথে একটি ভিডিও যেখানে আপনি বৃষ্টির সময় সকাল এবং বিকালের পরিবেশ দেখতে পারবেন।
ভিডিও: https://youtu.be/qlNCVDYBz1Y
সারিঘাট: সারিঘাট হচ্ছে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রোজেক্টের পিছনের একটি এরিয়া যা আইন্তা এবং আড়াকুল গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খালের অংশবিশেষ। খালের পাশ দিয়ে রয়েছে সার ধরে করেই গাছ যার ফলে এখন এই জায়গাটা সারিঘাট নামে বেশি পরিচিত।
খালের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং করা হয়েছিল এবং রিভার প্রজেক্ট এর বালু আড়াকুল গ্রামের দিকেে ফেলার কারণে এখানে শরৎকালে দেখা মিলে বিস্তীর্ণ কাশবন।

যাতায়াত:
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে পোস্তগোলা ব্রিজে আসতে হবে। তারপর কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ বাস স্ট্যান্ড/পোস্তগোলা ব্রিজের কেরানীগঞ্জ প্রান্তে যাবেন। ব্রিজের গোড়া থেকেই রিকশাতে যেতে পারবেন সারিঘাট। সাধারণ দিনে ৩০ টাকা নিবে ছুটির দিনে ৪০-৫০ টাকা নিতে পারে।
কাশবনে চাইলে সারিঘাটের শেষ দিক দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন আর যদি তাড়াহুড়া থাকে তবে নৌকায় পার হতে পারেন।

কাশবন ছাড়া আর কি দেখার এবং ঘুরার আছে:
সারিঘাট আসার পরে শুরুতেই পড়বে কায়াকিং পয়েন্ট। কায়াক একটি ছোট্ট নৌকা সদৃশ জলের বাহন। কায়াক হাতে চালাতে হয়, বৈঠার মতো প্যাডেল দিয়ে। ক্ষেত্র বিশেষে একটি কায়াকে ১, ২ বা ৩ জন উঠতে পারে। বাংলাদেশে খুব বেশিদিন হয়নি কায়াকের প্রচলন। তাই চাইলে নিতে পারেন কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা। ঘণ্টা প্রতি ১৫০টাকা প্রতিজন নিবে। এখানে মাত্র তিনটি কায়াক বোট আছে তাই বিকেল বেলা একটু চাপ পড়ে কায়াকিং করার জন্য তাই পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে যাবেন। এছাড়া নৌকা ভাড়া করতে পারেন ঘণ্টা প্রতি ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়।

খাওয়া-দাওয়া:
এখানে বেশ অনেকগুলো টং ঘর রয়েছে যেখানে আপনি গোল গোল্লা, চাপটি, পিয়াজু আলুর চপ, ঝালমুড়ি ফুচকা খেতে পারেন।
নতুন কিছু রেস্টুরেন্টে হয়েছে সেগুলোতে আপনি বারবিকিউসহ অন্য খাবারগুলো চেখে দেখতে পারেন।
কখন গেলে ভালো:
ছুটির দিন বাদে গেলে সকাল দশটা এগারোটা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে আসলে ভালো কারণ বিকালে প্রচুর মানুষ ঘুরতে যায়।

দিয়া বাড়ি যেতে চাইলে:
উত্তরা মাস্কট প্লাজার সামনে থেকে রিক্সা করে কিংবা লেগুনা কিংবা বাসে করে যেতে পারেন দিয়াবাড়ি। লেগুনা ও বাস দিয়াবাড়ি পর্যন্ত যাবে না মাস্কট প্লাজার সাথের রাস্তা টা শেষ পর্যন্ত যাবে সেখান থেকে রিক্সা করে যেতে পারেন।
উত্তরা নিউ প্রজেক্টের পেছনের অংশ অনেক কাশফুল রয়েছে। মিরপুর বেড়িবাঁধে রাস্তা ধরেও আসা যায়।

আফতাবনগর:
রামপুরা ব্রিজ অর্থাৎ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে রিক্সা করে যেতে হবে আফতাবনগর প্রজেক্টের শেষের দিকে।
বিশেষ সতর্কতা:
উপরে উল্লেখিত প্রতিটা স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল তাই সন্ধ্যার আগে ফিরে আসা উচিত এবং নিজ দায়িত্বে সচেতনভাবে ঘোরাঘুরি করা।
তথ্য ও ছবি সহায়তা: মাহাবুব হাসান