অল্প সময়ে স্বল্প দূরত্বে ঘুরতে অথবা ক্যাম্পিং করতে চাইলে ঢাকার পাশের জেলা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় রয়েছে চমৎকার এক জায়গা। পদ্মহেম ধাম, লালন আখড়া স্থানীয় ভাবে বাউল বাড়ি নামেই পরিচিত। লালন আখড়া শুনেই অনেকের উৎসাহী মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মুন্সিগঞ্জে সাঁইজি পদার্পণ করলেন কবে?

তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, এখানে সাঁইজি না আসলেও এসেছে সাঁইজির দর্শন। তাঁর ভালোবাসায় মানব ধর্ম প্রচারে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক কবির হোসেন ভাই গড়ে তুলেছেন লালন প্রেমের এই আখড়া, যেখানে প্রতিবছর হয় সাধুসঙ্গ। এছাড়া যেকোনো সময় যেকোনো পরিব্রাজক নিতে পারে আশ্রয়, কাটাতে পারে ধীরে বয়ে চলা ইছামতীর তীরে দুটি বেলা।

জায়গাটি গাছে ঘেরা সুনিবিড়, পাখপাখালির কলকাকলীতে ভরা, পাশেই রয়েছে খোলা মাঠ তার পাশে বয়ে চলছে শান্তস্বভাবের মায়াবী ইছামতী নদী তার ওপাশে কৃষক চাষ করছে জমিতে। নদীতে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় নৌকায় ভেসে ভেসে সংসার করা বেদেদের দল, হয়তো মানবপ্রেমের দর্শন এখানে বলেই কেউ না কেউ ভালোবাসায় আশ্রয় নেয়।

সবচেয়ে উপভোগ্য সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময়টা, ইছামতী ঠিক এখানে এসেই তিনদিকে তিনটি বাক নিয়েছে যার ফলে একটি চমৎকার মোহনার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থাপনার ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঠের দোতলা ঘরে বৈঠকখানা, লালনগীতি বিদ্যালয়, আছে বটতলা আর আছে প্রাণে অন্যরকম একটা আবহ সৃষ্টি করা মায়াভরা একটা ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ। বাউলশিল্পীদের প্রাণের মায়ায় তৈরি এই আস্তানায় আছে বাউলদের প্রতীক সাঁইজির ভালোবাসার এক তারার প্রতিকৃতি যা উদ্ভোদন করেছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।

যেকোনো জায়গা থেকেই এখানে এসে সাঁইজির বারামখানায় দুদণ্ড সময় কাটিয়ে যেতে পারেন। কোনো প্রবেশ ফি নেই। যদি কেউ আতিথেয়তা নিতে চান তাহলে থাকার জন্য একটি ঘর আছে সেখানে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা হতে পারে। তাঁবু এবং ক্যাম্পিং সরঞ্জাম সাথে করে নিয়ে গেলে আশ্রম সংলগ্ন খোলা মাঠে ক্যাম্পিং করেও কাটিয়ে কোনো জোৎস্না রাত। রাতে জমে উঠতে পারে বাউল সংগীত। তবে যেকোনো ভাবেই রাতে থাকার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।

ঢাকা থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায়, গুলিস্তান থেকে টংগীবাড়ি বা সোনারং গামী বাসে উঠে সিরাজদীখান বাজার নেমে বাউল বাড়ি বললেই অটোতে যেতে পারবেন।

এছাড়া কদমতলী বা পোস্তগোলা থেকে সিএনজিতে যাওয়া যায়। সিএনজিতে যেতে হবে কেরানীগঞ্জের মোল্লারহাট পর্যন্ত, সেখানে ইছামতীর ছোট্ট একটা অংশ পার হতে হবে খেয়াযোগে। তারপর অটোরিকশাতে করে বাউল বাড়ি বললেই যাওয়া যাবে। মুন্সিগঞ্জ থেকেও যেতে পারেন, লোকাল যানবাহন নেই তবে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে বালুচর বাজারের একটু পরে ব্রিজের গোড়ায় নেমে হেঁটে যেতে হবে নদীর পার ঘেঁষা মেঠোপথে।

খাওয়াদাওয়ার জন্য এখানে চায়ের দোকান ও মুদি দোকান পাবেন একটা। হাল্কা চা নাস্তা খেতে পারবেন। ক্যাম্পিং করলে রান্না করার প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া ভালো। আশ্রমের দায়িত্বে থাকা জালাল ভাইকে বললেও আশেপাশের বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে দিতে পারে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বালুচর বাজারে গিয়েও খাবার খেয়ে আসা বা নিয়ে আসা যেতে পারে। বালুচর বাজারের মিষ্টি, দই অত্যন্ত সুস্বাদু।

জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমরা যারা ওখানে যাবো তাদের, তাই নিজেদের ব্যবহৃত অপচনশীল দ্রব্য ফেলে নোংরা করে না আসার আবেদন রইলো।

এটা সাধারণ কোনো পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নয়, যারা সাঁইজিকে ভালোবাসেন, মানব প্রেমে বিশ্বাস করেন, প্রকৃতিকে ভালোবাসেন আশা করি তারাই এখানে আসবেন এবং এখানের কৃষ্টি আচারের সাথে মানানসই ব্যবহার করবেন।

পদ্মহেম ধামের গুগল ম্যাপ লোকেশন:
http://Padmahema Dham, Sai cherish tola Dosorpara, Sirajdikhan,, Munshiganj https://maps.app.goo.gl/oUTsPcDzGoo1Va8Y8
ফিচার ছবিঃ তাহান ভাই।
ভ্রমণগুরু সাইটে প্রকাশিত আমার সব লেখা দেখতে ভিজিট করুন এই লিঙ্কে:
https://www.vromonguru.com/author/jewel/